Sunday, February 5, 2017

Bhawal National Park

ভাওয়াল জাতীয় উদ্যান
 বাংলাদেশের প্রথম জাতীয় উদ্যান এটি যা বাংলাদেশ বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ আইন (১৯৭৪) অনুযায়ী ৫,০২২ হেক্টর জায়গা জুড়ে পৃথিবীর অন্যান্য উন্নত দেশের আদলে অভয়ারণ্যের ছাঁচে ভাওয়াল শালবনে এই উদ্যান গড়ে তোলা হয়। ১৯৮২ সালে এটিকে  আনুষ্ঠানিকভাবে জাতীয় উদ্যান হিসেবে ঘোষিত হয়। এটি ঢাকা বন্যপ্রাণী ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের অধীনে পরিচালিত হয়।
 এই উদ্যানটি রাজধানী ঢাকা থেকে উত্তরে প্রায় ৪০ কিলোমিটার দূরে গাজীপুর জেলার গাজীপুর সদর ও শ্রীপুর উপজেলায় অবস্থিত।এর ভৌগলিক অবস্থানঃ ২৪°৫′৪৪.৯৮″ উত্তর ৯০°২৪′১৪.৪″ পূর্ব
 
গাজীপুরের শাল বন এক সময় ভাওয়াল রাজার জমিদারীর অংশ হিসেবে খ্যাত ছিল। ১৯৫০ সলের জমিদারী প্রথা বিলুপ্ত ও প্রজাসত্ব আইন জারীর পর শালবন সমৃদ্ধ বনভূমি বন বিভাগের নিয়ন্ত্রণে এবং বাইদ জমি ব্যক্তি মালিকানাধীনের নিয়ন্ত্রণে চলে যায় ।
 ভাওয়াল গড়ের প্রাকৃতিক বন  "গ্রীষ্ম মণ্ডলীয় আদ্র পত্র পতনশীল বন "( Tropical Moist Deciduous Forest) এর অন্তর্ভুক্ত । এই বনের প্রধান বৈশিষ্ট্য হোল শীতকালে এইখানকার শাল গাছ গুলার পাতা ঝরে যায় এবং এই পাতা মাটিতে মিশে ও পোঁচে হিউমাস তৈরী হয়, ফলে মাটি তার উর্বরতা ফিরে পায়। মাটি উর্বর হওয়ার ফলে এখানে মূল শাল বৃক্ষের পাশাপাশি বিভিন্ন ধরণের ফলজ, বনজ ও অনেক প্রজাতির ঔষধি গাছ জন্মায়। এইখানকার প্রধান বৃক্ষ হোলো শাল। মূল কর্তিত গাছ থেকে পুনরায় গাছ গজানোর গুন থাকায় স্থানীয় ভাবে এগুলোকে গজারী বনও বলা হয়ে থাকে। এইখানকার বর্তমান শাল বন মূলত দ্বিতীয় পর্যায়ভুক্ত শালবন, যা কপিছ থেকে উৎপন্ন হয়েছে।
 SRCWP প্রকল্পের আওতার এক জরীপে এ বনে ৩৫৬ প্রজাতির উদ্ভিদ সনাক্ত করা হয়েছে যার মধ্যে  ২৪ প্রজাতির লতা (Climber) ,  ২৭ প্রজাতির ঘাস (Herb), ৩ প্রজাতির তাল জাতীয় বৃক্ষ (Palm),১৯ প্রজাতির গুল্ম    (Shurb), ১০৫ প্রজাতির ঔষধি, ৪৩ প্রজাতির অন্যান্য বৃক্ষ। শাল (Shorea robusta) এ উদ্যানের প্রধান বৃক্ষ। অন্যান্য বৃক্ষের মধ্যে কাঁঠাল,আজুলি, কুম্ভি,গান্দী গজারি, আমলকি, বহেড়া, হরিতকী, করই, শিমূল, হলদু, পলাশ, চাপালিশ, কুসুম, পিতরাজ, উদাল ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। এছাড়া এ বনে কৃত্রিমভাবে ইউক্যালিপটাস আর রাবারের বনায়ন করা হয়েছে যা জীববৈচিত্রের জন্য হুমকি সরূপ ।

 এক সময়ে প্রাণীবৈচিত্রে  ভরপুর ভাওয়াল জাতীয় উদ্যান বন্যপ্রাণী এর জন্য বেশ উপযোগী আবাসস্থল। কালের আবর্তে বাঘ,কালোচিতা, চিতাবাঘ, মেঘলা চিতা,হাতি, ময়ূর, মায়া হরিন, সাম্বার হরিন হারিয়ে গেলেও বর্তমানে টিকে আছে  ১৩২ প্রজাতির বিভিন্ন ধরণের বন্যপ্রাণী যার মধ্যে ১৮ প্রজাতির স্তন্যপায়ী, ১৯ প্রজাতির সরীসৃপ, ১১ প্রজাতির উভচর সহ ৮৪ প্রজাতির পাখি বিদ্যমান ।
 টিকে থাকা প্রাণী গুলা হোলো Indian Flying Fox, Indian False Vampire Bat, Asiatic Brush-tailed Porcupine, House Rat, Long Tailed Tree Mouse, Irrawaddy Squirrel, Wild Boar, Spotted Dear, Common Mongoose, Small Indian Mongoose, Large Indian Civet, Small Indian Civet, Bengal Fox, Golden Jackel, Jungle Cat, Fishing Cat and Rhesus Macaque.


 উভচর প্রাণী এর মধ্যে এখনো টিকে আছে Asian Common Toad , Twin-spotted Tree Frog, Yellow-striped Frog, Nepal Cricket Frog,Pierre's Cricket Frog, Syhadra Cricket Frog,Indian Bull Frog, Skipper Frog, Indian Baloon Frog, Berdmore's Narrow-mouthed Frog, Ornate Microhylid Frob. 

 সরীসৃপ প্রজাতির মধ্যে এখনো টিকে আছে Indian Roofed Turtle, Crowned River Turtle, Black Spotted Pond Turtle, River Terrapin, Tokay Gecko, Brook's House Gecko, Common House Gecko, Oriental Garden Lizard, Keeled GrassSkink, Bengal Monitor, Yellow Monitor,  Striped Keelback, Checkered Keelback, Common Vine Snake, Indian Rat Snake, Common Krait, Banded Krait, Spectacled Cobra 
ও  Monocled Cobra
৭০ প্রজাতির পাখি দেখা যায় ভাওয়াল জাতীয় উদ্যানে Lesser Whistling Duck, Rufous woodpecker, Black-rumped Flameback, Fulvous-breasted woodpecker, Streak-throated woodpecker, Coppersmith Barbet, Lineated Barbet, Common Hoopoe, Indian Roller, Green Bee-eater, Common Kingfisher, White- throated Kingfisher, Storkbilled Kingfisher, Pied Kingfisher, Asian Koel, Indian Cuckoo, Jacobin Cuckoo, Greater Coucal, Rose-ringed Parakeet, Red-breasted Parakeet, Asian Palm Swift, LittleSwift, Barn Owl, Spotted Owlet, Rock Pigeon, Eurasian Collared-dove, Red Turtle-dove, Yellow-footed Green Pigeon, Pompadour Green Pigeon, White breasted waterhen, Indian Pond Heron, Little Egret, Cattle Egret, Red-wattled Lapwing, Crested Serpent Eagle, Black Kite, Brahminy Kite, Shikra, Little Cormorant, Lomg-tailed Shrike, House Crow, Large-billed Crow, Rufous Treepie, Black Hooded Oriole, Bronzed Drongo, Black Drongo, Spangled Drongo, Ashy Woodswallow, Large Cuckooshrike, Small Minivet, Common Woodshrike, Black-naped Monarch, White-throated Fantail, White-rumped Shama, Orirntal Magpie Robin, Common Myna, Jungle Myna, Asian Pied Starling, Great Tit, Red-vented Bulbul, Red-whiskered Bulbul, Common Tailor Bird, Jungle Babbler, Purple Sunbird, Purple-rumped Sunbird, Pale-billed Flowerpecker, House Sparrow, BayaWeaver, Common Iora, Orange-headed Thrush ।
 ভাওয়াল জাতীয় উদ্যান বাংলাদেশের আকর্ষণীয় একটি পর্যটন কেন্দ্র রাজধানী শহরের অতি নিকটবর্তী হওয়ায় উদ্যানটিতে প্রচুর দর্শনাধীর চাপ লক্ষ করা যায়। বিশেষত শুস্ক মৌসুমে (নভেম্বর-ফেব্রুয়ারী) প্রচুর লোক এখানে পিকনিক করতে আসে। সরকারী তথ্য মতে প্রতি বছর প্রায় ৩,৭৫,০০০ দর্শনার্থী এখানে আসেন। এ বনের উপর প্রায় ৫,০০০ এর ও বেশী লোক তাদের জীবিকা নির্বাহের জন্য নির্ভরশীল। এখানে বেশ কয়েকটি পিকনিক স্পট রয়েছে। স্পটগুলোর হলো: আনন্দ, কাঞ্চন, সোনালু, অবকাশ, অবসর, বিনোদন। এখানকার কটেজগুলো হলো: বকুল, মালঞ্চ, মাধবি, চামেলী, বেলী, জুঁই ইত্যাদি। এখানে ১৩টি কটেজ ও ৬টি রেস্টহাউজ রয়েছে। রাত্রি যাপনের জন্য এখানে অনুমতি দেওয়া হয় না। পিকনিক স্পট কিংবা রেস্ট হাউস ব্যবহার করতে হলে বন বিভাগের মহাখালী কার্যালয় থেকে আগাম বুকিং নিতে হয়।ঢাকা থেকে এ জাতীয় উদ্যানে সরাসরি সড়ক যোগাযোগ রয়েছে। উদ্যানটি ঢাকা ময়মনসিংহ মহাসড়কের সাথেই অবস্থিত। ঢাকার মহাখালী হতে ময়মনসিংহ অভিমুখে যেকোন বাসে এ উদ্যানে যাওয়া যায়। এছাড়া ভাড়া করা গাড়ী নিয়ে সরাসরি যাওয়া যায়। 


শালবন ঢাকার অতি নিকটে হওয়ায় দ্রুত শিল্পায়ন, জবর দখল, গো-চারণ, বন ধ্বংস করে কৃষি জমির বিস্তার, আবাসন, ভূমি বিরোধ ও ভূমিদস্যুতা কারণে শালবনের অস্তিত্ব ও জীববৈচিত্র্য দিন দিন দ্রুত  হারিয়ে যাচ্ছে।

 বন্যপ্রাণী প্রাকৃতিক পরিবেশ, খাদ্যচক্র ও জীববৈচিত্র্যের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ।মানুষের অস্তিত্বের জন্য বন্যপ্রাণীর ভূমিকা অপরিসীম।তাই পরিবেশ ও আমাদের কথা চিন্তা করে বন রক্ষ্যায় আমাদের এগিয়ে আসা  উচিৎ।

No comments:

Post a Comment