Sunday, February 5, 2017

Chunati Wildlife Sanctuary

 চুনতি বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য

 
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার জীববৈচিত্র্যের একটি বিশাল অংশ নিয়ে গঠিত চুনতি বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য। চুনতি অভয়ারণ্য বাংলাদেশের একটি সংরক্ষিত বনাঞ্চল এবং বন্যপ্রাণীর অভয়ারণ্য। এটি চুনতি অভয়ারণ্য নামেও পরিচিত। এর আয়তন ৭ হাজার ৭৬৪ হেক্টর। বনের সমৃদ্ধ জীববৈচিত্র্য রক্ষা ও বিপন্ন বন্যপ্রাণী সংরক্ষণের জন্য ১৯৮৬ সালে এই অভয়ারণ্য প্রতিষ্ঠা করা হয়। চুনতি অভয়ারণ্য চট্টগ্রামের বাঁশখালি, লোহাগাড়া ও সাতকানিয়া উপজেলা এবং কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার জুড়ে বিস্তৃত। চট্টগ্রাম (দক্ষিণ) বনবিভাগের চুনতি রেঞ্জ ও জলদি রেঞ্জ নিয়ে এ অভয়ারণ্য গড়ে তোলা হয়েছে। প্রকল্প এলাকায় চুনতি ও জলদি রেঞ্জের অধীনে সাতটি বিট অফিস স্থাপন করা হয়।
 চট্টগ্রাম শহর থেকে প্রায় ৭০ কিলোমিটার দক্ষিণে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের পাশে এর অবস্থান।এর ভৌগলিক অবস্থানঃ ২১°৫৮′ উত্তর ৯২°০৪′ পূর্ব

এই অভয়ারণ্য বিশালাকায় শতবর্ষী মাদার, গর্জন গাছের জন্য সুপরিচিত যা এই বনের একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য। এখানে বিভিন্ন প্রজাতির গর্জন, চাপালিশ, বাঁশ, বেত, গুল্ম ও ঘাস জাতীয় প্রজাতি বিদ্যমান রয়েছে। 

বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে বন্য এশিয়া হাতির যাতায়াতের একটি করিডোর হিসেবে এই অভয়ারণ্যের গুরুত্ব অপরিসীম। এ বনাঞ্চলের উল্লেখযোগ্য প্রাণী বন্য হাতি। এছাড়াও বন্য শুকর, বানর, হনুমান, মায়াহরিণ, সাম্বরসহ অন্য প্রাণী লক্ষ্য করা যায়। ২০১২-১৩ সালে জিআইজেডের আর্থিক সহায়তায় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণী বিদ্যা বিভাগ পরিচালিকত জরিপে দেখা গেছে অভয়ারণ্য এলাকায় ১৬০ প্রজাতির পাখি, ৯৯ প্রকার অমেরুদ-ি প্রাণী ৩৩ প্রকার সরীসৃপ, ২২ প্রকার স্তন্যপায়ী, ২৩ প্রকার উভচর প্রাণী রয়েছে।

তবে বন ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষার জন্য এই বনের ব্যবস্থাপনা ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে স্থানীয় জনগণের সম্পৃক্ততায় এখানে সহব্যবস্থাপনা প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে। তবে ক্রমাবর্ধমান জনসংখ্যার চাপ, নির্বিচারে গাছ কাটা, কৃষি জমিতে রূপান্তরের মাধ্যমে বন্যপ্রাণীর আবাসস্থান ধ্বংস প্রভৃতি কারণে এ বনের অস্তিত্ব হুমকির আজ হুমকির সম্মুখীন ।  এই বনে টিলাময় এবং অনেক জায়গায় পাহাড়ী ভূপ্রকৃতি, প্রচুর অগভীর ও গভীর খাদ রয়েছে। বনের ভেতর দিয়ে প্রচুর খাঁড়ি বা পাহাড়ী ছড়া এঁকেবেঁকে বয়ে গেছে। এই ছড়াগুলোই বন্যপ্রাণীদের পানির উৎস হিসেবে কাজ করছে।বন বিভাগ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে পরিবেশগত প্রভাব ও বনজসম্পদের ওপর মানুষের বর্ধিত চাপের কারণে বনভূমি উজার হয়ে গেছে। 


সরকারের গৃহীত পদক্ষেপের কারণে ৯৭ সালের তুলনায় এ বনে বন্যপ্রাণীর সংখ্যা আগের চেয়ে অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে বলে জানিয়েছেন বন বিভাগের কর্মকর্তারা।তারা জানান, ৮৬ সালে চুনতি বনাঞ্চলকে সংরক্ষিত ঘোষণা করা হলেও অবৈধভাবে গাছ কাটা, জনবসতি স্থাপন, কৃষি ফসলের আবাদ, অভয়ারণ্যের উদ্ভিদ ও প্রাণী সম্পদের প্রচুর ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। এ অবস্থা রোধ করতে বন বিভাগ বিভিন্ন জাতীয়, আন্তর্জাতিক বেসরকারী সংস্থা, আইপিএসি, জিআইজেড ও ইউএসআইডিকে সঙ্গে নিয়ে গ্রবেষণা ও উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে এই বনাঞ্চলে। এর ধারাবাহিকতায় চুনতি জলদী রেঞ্জে, সহব্যবস্থাপনা কার্যক্রম শুরু করে। এছাড়াও বন রক্ষায় জন্য স্থানীয় অধিবাসীদের নিয়ে গঠন করা হয়েছে কমিউনিটি প্রেট্রোলিং গ্রুপ। তারা বন বিভাগ ও সহব্যবস্থাপনা কমিটির সঙ্গে বন রক্ষায় কাজ করে যাচ্ছে। চুরতি বনভূমি এলাকার বড়হাতিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারমান মোঃ জুনায়েদ বলেন, বন রক্ষায় এ 
অঞ্চলের লোকজনকে বিকল্প কর্মসংস্থানের মাধ্যমে জীবিকায়িত করা হচ্ছে। ফলে লোকজন আর বন থেকে কাঠ সংগ্রহ করছে না। তাদের অর্থনৈতিক উন্নয়নেও বিভিন্ন এনজিও কাজ করছে। জনগণ এখন বন ধ্বংসের বিষয়ে এখন অনেকটাই সচেতন। তিনি জানান, এলাকার ১৬ পরিবারকে বিকল্প কর্মসংস্থানের মাধ্যমে জীবিকায়নের ব্যবস্থা করা হয়েছে।


চট্টগ্রাম দক্ষিন বন বিভাগের চুনতি রেঞ্জাধীন বরইতলী বিট। কক্সবাজার জেলার চকরিয়া থানার অন্তর্গত বানিয়ার ছড়া নামক স্থানে। চট্টগ্রাম কক্সবাজার সড়কের সাথে।হিন্দুকূশ পর্বতমালা বঙ্গোপসাগর স্পর্শ করেছে যে প্রান্তে সেই দক্ষিণ চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার জেলার সীমান্তের পর্বতরাজি প্রাগৈতিহাসিক কাল হতে চিরসবুজ ঘন ক্রান্তিয় বৃষ্টি অরণ্যে আবৃত ছিল। এই এলাকার অরণ্য সমূহের অন্যতম বৈশিষ্ট হল- অন্যান্য বৃক্ষ প্রজাতির সাথে গর্জন জাতীয় বৃক্ষের প্রাধান্য। মূল্যবান এই গর্জন বৃক্ষের বন চির সবুজ বলে এর সৌন্দর্য নয়নাভিরাম যা প্রকৃতির সুষমা মন্ডিত।
কক্সবাজার-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পার্শ্বে শহরের কোলাহল ও দূষণ হতে মুক্ত চট্টগ্রাম শহর থেকে ৮২ কিঃমিঃ দূরে যেখানে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, বান্দরবান জেলার মিলনস্থল বরইতলী (বানিয়ারছড়া) নামক বিটের সংরক্ষিত বনের ২০০.০ হেক্টর এলাকা জুড়ে বড়ইতলী প্রকৃতি পর্যটন কেন্দ্র।
শতাধিক বছর বয়সী শত শত গর্জন বৃক্ষ সম্বলিত এই বনটি সকল প্রাকৃতিক ও মানবসৃষ্ট বিরূপতা ও বৈরীতাকে অতিক্রম করে কালের সাক্ষী হয়ে টিকে রয়েছে। প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে প্রকৃতির সুনিপুনতা প্রকাশের জন্য শিক্ষার্থী, গবেষক এবং প্রকৃতিপ্রেমী মানুষের জন্য বাঁচিয়ে রেখেছে নিজের অস্তিত্ব।

No comments:

Post a Comment