Sunday, February 5, 2017

Ramsagar National Park

রামসাগরঃ
  মানবসৃষ্ট বাংলাদেশের বৃহত্তম জলাধারের মধ্যে অন্যতম জলাধার রামসাগর । এর বিশালতার কারনেই নামের শেষে সাগর যুক্ত করা হয়েছে। রামসাগর হিমালয়ের পাদদেশে অবস্থিত দিনাজপুর জেলায়  দেশের প্রাচীন দীঘিগুলোর একটি।
রামসাগর দীঘিটির আয়তন চার লাখ ৩৭ হাজার ৪৯২ বর্গমিটার, দৈর্ঘ্য এক হাজার ৩১ মিটার ও প্রস্থ ৩৬৪ মিটার। গভীরতা গড়ে প্রায় ১০ মিটার। পাড়ের কাছাকাছি দীঘির গড় গভীরতা প্রায় চার ফুট। পাড়ের উচ্চতা ১৩ দশমিক ৫ মিটার।
 দিনাজপুর সদর উপজেলার তাজপুর গ্রামে অবস্থিত এই রামসাগর। দিনাজপুর পার্বতীপুর রেলস্টেশন থেকে মাত্র ৮ কিলোমিটার দূরেই অবস্থিত ( স্থানাঙ্কঃ ২৫°৩৩′১৬″উত্তর ৮৮°৩৭′২৬″পূর্ব) । ১৯৬০ সালে দীঘিটিকে বন বিভাগের তত্ত্বাবধানে আনা হয়। ১৯৯৫-৯৬ সালে একে আধুনিক পর্যটনকেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলা হয়। ২০০১ সালের ৩০ এপ্রিল রামসাগরকে জাতীয় উদ্যান হিসেবে ঘোষণা করা হয়।

এর পাশেই গড়ে তোলা হয়েছে কিছু পিকনিক স্পট ,শিশুপার্ক ও মিনি চিড়িয়াখানা। শীতকালে বিপুল সংখ্যক পরিযায়ী পাখি এই জলাভূমিতে আগমন করে। জানা যায়, ১৯৯৯ সালের ১২ আগস্ট রামসাগর জাতীয় উদ্যানের মিনি চিড়িয়াখানায় ৬টি চিত্রা হরিণ নিয়ে একটি হরিণ প্রজনন কেন্দ্রও গড়ে তুলা হয়।  এখানে প্রতিবছর নতুন নতুন শাবক জন্ম নেওয়ায় হরিণের সংখ্যা বেড়ে বর্তমানে তা ৪২-এ দাঁড়িয়েছে। রামসাগরে বেড়াতে আসা পর্যটকদের দারুণভাবে আকৃষ্ট করে এসব হরিণ।


উদ্ভিদ ও জীব বৈচিত্রঃ
জলাভূমির চারপাশ দিয়ে ফলজ, বনজ ও শোভাবর্ধন কারী গাছ পালা লাগানো হয়েছে। শীতকালে পরিযায়ী পাখির উপস্থিতি এ অঞ্চলের জীববৈচিত্রের প্রধান আকর্ষণ। এই উদ্যানে শিয়াল,বেজি , গুইসাপ , বিভিন্ন প্রজাতির বেঙ ও সাপ দেখা যায় ।





দীঘিটির নির্মাণ কাহিনীঃ
লোকো গল্পে আছে, রাজা প্রাণনাথের শাসনামলে দিঘীটি খনন করা হয়। তার রাজত্বকালে রাজ্যে একসময় প্রচণ্ড খরা দেখা দেয়। কোথাও সামান্য খাবার পানি পর্যন্ত পাওয়া যাচ্ছিল না। তখন রাজা প্রাণনাথ এই বিশাল দীঘি খনন করেন। মাত্র ১৫ দিনে এই দীঘির খনন কাজ শেষ হয়। কিন্ত খনন শেষে দেখা যায় দীঘিতে পানি উঠছে না। তখন রাজা স্বপ্নে দেখেন, রাজকুমার রামকে যদি দীঘির মাঝখানে দেবতার উদ্দেশ্যে বলি দেয়া হলেই কেবল দীঘিতে পানি উঠবে।রাজা সবাইকে ডেকে তার স্বপ্নাদেশ শোনালেন। রাজা চাইছিলেন না তার ছেলেকে হারাতে। কিন্ত রাজকুমার রাম নির্ভীকভাবে প্রজাদের জন্য নিজের জীবন উৎসর্গ করতে রাজি হন। পরদিন দীঘির মাঝখানে বলির মঞ্চ প্রস্তুত করা হয়। সবাইকে কাঁদিয়ে বলি দেয়া হয় রাজকুমার রামকে। এরপরই ভরে ওঠে দীঘিটি। দীঘির পানিতে তলিয়ে যায় রাজকুমারের মৃতদেহ। রাজকুমার রামের নামানুসারেই দীঘিটির নামকরণ করা হয় ‘রামসাগর’। অবশ্য স্থানীয়ভাবে এটি ‘নীলসাগর’ নামেও পরিচিত।

তবে ঐতিহাসিকদের মতে এই দীঘির ইতিহাস একটু অন্যরকম। তাদের দাবি, দিনাজপুরের বিখ্যাত রাজা রামনাথ এই দীঘি খনন করেন। রামনাথ ছিলেন দিনাজপুর রাজবংশের শ্রেষ্ঠতম রাজা। তিনি ১৭২২ সাল থেকে ১৭৬০ সাল পর্যন্ত দিনাজপুরে রাজত্ব করেন। দিনাজপুর রাজবংশের ইতিহাসের মতে, ১৭৫০ থেকে ১৭৫৫ সালের মধ্যে অর্থাৎ পলাশীর যুদ্ধের পূর্বে রামসাগর দিঘি খনন করা হয়।








No comments:

Post a Comment