Sunday, February 5, 2017

Nijhum Dweep National Park

নিঝুম দ্বীপ 

  অপার সম্ভাবনাময় সম্পদ আর ঐশ্বর্যে ভরপুর একটি রহস্যময় চরের নাম নিঝুম দ্বীপ ।  নোয়াখালী জেলার হাতিয়া উপজেলার অন্তর্গত  অপার সম্ভাবনাময় সমৃদ্ধ  নিঝুম দ্বীপ ১৯৪০ সালে বঙ্গবসাগরের কোল ঘেঁষে জেগে উঠা একটি চর । এটিকে দ্বীপ বলা হলেও , এটি  হাতিয়ার মুল ভূখণ্ডের  দক্ষিনে একটি চর । চরটি সমুদ্র পৃষ্ঠ থেকে ৬ ফুট উচু । ১৪,০৫০ একর এলাকা জুরে চরটি প্রথম দিকে অপরিচিতই ছিল , ওসমান নামের একজন বাথানিয়া তার মহিষের বাথান নিয়ে প্রথম নিঝুম দ্বীপ বস বাস শুরু করে , তার নামেই চর ওসমান নামে দীর্ঘ দিন পরিচিত ছিল । পরবর্তীতে চর ওসমানের সৌন্দর্য ও পিনপতন নীরবতায় মুগ্ধ হয়ে প্রকৃতি প্রেমিক হাতিয়ার ততকালিন সাংসদ আমিরুল ইসলাম এর নামকরন করেন নিঝুম দ্বীপ । বল্লার চর, চর ওসমান , কামলার চর এবং চর মুরি এই চারটি চর নিয়ে নিঝুম দ্বীপ । এই চর সংলগ্ন এলাকায় প্রচুর ইছা মাছ পাওয়া যেত বিধায় একে ইছামতির চর বলেও ডাকতো । কালের আবর্তে এই নামটি হারিয়ে যায় । চরটির মাঝে মাঝে এক সময় প্রচুর বালির ঢিবি বা টিলার মতো ছিল , এখন তা না থাকলেও চরটির নাম বাইল্যার ডেইল এখনো কিছু কিছু মানুষের মুখে শুনা যায় ।

৭০ এর দশকে বন বিভাগ এই চরে তাদের কার্যক্রম শুরু করে । চটা খাল , ডাক্তার খাল , ফটকা খাল , চমন খালি ,চৌধুরী খাল , নাছারি , গামছা খাল , বুট্টা খাল , ডুবের খাল , ঠুয়ার খাল, ল্যাংড়ার খাল , জারদ দোনা , আবজং খালি , ছোঁয়া খালি , বাদার খাল , চৌইদার খাল ,  CDSP খাল  সহ অসংখ্য খাল ও কেওড়া গাছের সমন্বয়ে নিঝুম দ্বীপটি ম্যানগ্রোভ বনে রূপ নেয় ।

 জন বসতি হীন এই বনে বন বিভাগ পরীক্ষামূলক ভাবে চার জোরা হরিন ছারে । বন বিভাগের অপরিপক্বতায় Ecosystem এর অভাবে দিন দিন এই জঙ্গলে হরিনের সংখ্যা বাড়তে থাকে । সুন্দরবন এর পরে এতো অধিক সংখ্যক হরিন আর কোন জঙ্গলে পাওয়া যায় না । এটি এখন হরিনের অভয়ারণ্য হিসাবে পরিচিত । ১৯৯৬ সালে হরিন শুমারি অনুযায়ী নিঝুম দিপে ২২০০০ হরিনের সংখ্যা রেকর্ড করা হয়। আইলা ও সিডরে বেশ কিছু হরিন মারা গেলেও ধারণা করা হয় নিঝুম দ্বিপে  ৪০০০০ হরিন আছে ।

 সুন্দরবনে খাদ্য শৃঙ্খল রক্ষায় যেমন  Royal Bengal Tiger , অজগর সহ কিছু মাংসাশী প্রাণী আছে যা হরিনের সংখ্যা নিয়ন্ত্রণে (Density) ভুমিকা রাখে । প্রতিটি বনে কোন প্রাণী কতটি থাকতে পারবে তার একটি নিজস্ব নিয়ম (Territory) আছে , কিন্তু নিঝুম দ্বিপে তা দেখা যায় না । যেমন বৃক্ষর মধ্যে কেওড়া গাছের আধিক্য সবচে বেশি অন্য গাছ নাই বললেই চলে ,তেমনি জীব জন্তুর মধ্যে হরিন দেখা যায় । প্রতিটি জঙ্গলে গাছ পালা সহ জীব জগতের একটা পারসপরিক  সম্পর্ক Eco-system থাকে , নিঝুম দ্বিপে সম্পূর্ণই অনুপস্থিত । নিঝুম দ্বিপে হরিন ছাড়া আছে শিয়াল ও এলাকার কুকুর । শিয়াল জঙ্গলের কিছুটা শৃঙ্খল মেনে চললেও এলাকার কুকুর তা মেনে চলে না। নিঝুম দ্বিপের কুকুর গুলা খায় একটা হরিন , কিন্তু নষ্ট করে ৩/৪ টা হরিন । এ ছারা এখানে আছে হরিনের Food habit সমস্যা ।  এখানে কেওড়া ও কিছু গাস ছারা আর কোন খাদ্য নাই হরিনের জন্য । আর কেওড়া গাছ গুলা বড় হয়ে যাওয়াতে হরিনের নাগালের বাহিরে চলে গেছে । এখানে নাই কোন বানর যে হরিনের জন্য কেওড়া ফল বা পাতা ছিরে ফেলাবে । হরিন ও বানরের Mutualism এখানে নাই । যার কারনে হরিনের খাদ্যের প্রকট সমস্যা এই জঙ্গলে । খাদ্যের সমস্যা ও কুকুরের অযথা নষ্ট করার কারনে অনেক হরিন মরে পরে থাকে । নাই কোন শকুন যে মরা হরিন গুলা খাবে । এতে হরিন গুলো পচে নানা রকমের রোগ জিবানু ছড়ায় ।এই কারনে ক্ষত রোগ ও ক্ষুরা  রোগে আক্রান্ত নিঝুম দ্বিপের হরিন গুলো ।

এটি অথিতি পাখি চলাচলের একটি পথ । শীতের পাখি ছারাউ এখানে অনেক দেশিও পাখি আছে । খাল বিলের মাছ ও বিভিন্ন পোকামাকড় থাকলেও তেমন কোন ফলের গাছ নাই পখির খাদ্যের জন্য । বিভিন্ন প্রজাতির ফল ও পাখির বাসা করার জন্য বিভিন্ন প্রজাতির বৃক্ষ এর সমন্বয়ের অভাব আছে এই জঙ্গলে । চৌধুরী খাল এর আশেপাশে ঘুরে দেখা গেলো তেমন কোন ঝোপ ঝার নাই যাতে বাসা করতে পারে পাখি , বন বিরাল , বাগডাশ সহ বিভিন্ন জীব জন্তু ।

জঙ্গলে কিছু ছোট সাপ ছারা তেমন কোন সাপ চোখে পরে নাই এই অঞ্চলে । এক বার অজগর ছারা হলেও বাঁচে নাই এইখানকার পরিবেশের কারনে । ব্যাঙ , খরগোশ , বেজি সহ অনেক প্রাণী অনুপস্থিত যা এই জঙ্গলের Eco-system এর দুর্বলতা প্রকাশ পায় ।










করনিয়ঃ প্রথমত জীব বিজ্ঞানী , উদ্ভিদ বিজ্ঞানী ,পরিবেশ বিজ্ঞানী সহ বিশেষজ্ঞদের সাথে আলোচনা করে এখানে বিভিন্ন প্রজাতির ফলজ , বনজ ও ঔষধী গাছ লাগাতে হবে । যেহেতু এটি একটি ম্যানগ্রোভ বন তাই এখানে সুন্দরি(Heritiera fomes), গেওয়া (Excoecaria agalloch) , গরান ( Cerips Decandra ), ধুন্দল ( Xylocarpus granatum),গোল পাতা ( Nypa fruticans) , অর্কিড , বুনফুল  সহ বিভিন্ন প্রজাতির গাছ লাগানো যেতে পারে । সেই সাথে বিভিন্ন প্রজাতির লতা গুল্ম Poresia, Coaractata, Myriostachy, Wightiana, শন ( Imperrata cylindrical),নল খাগড়া (Phragmites karka) লাগাতে হবে । সেই সাথে এখানকার আবহাওয়ার সাথে বিবেচনা করে ব্যাঙ , সাপ, গুই সাপ , খরগোস , কাঠ বিড়ালী , বাগডাশ , বন বিড়াল , বিভিন্ন প্রজাতির বানর , বন শুয়োর  ছারা যেতে পারে । হরিন শুমারি করে যদি দেখা যায় হরিন বেশী হয়ে গেছে তাহলে হরিন অন্যত্র সরিয়ে নিতে হবে ।

No comments:

Post a Comment