Sunday, February 5, 2017

Rema-Kalenga Wildlife Sanctuary


রেমা–কালেঙ্গা বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য
  রেমা–কালেঙ্গা  বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় পাহাড়ি প্রাকৃতিক বনাঞ্চল এবং বন্যপ্রাণীর অভয়ারণ্য। এটি একটি সংরক্ষিত বনাঞ্চল । এই অভয়ারণ্যটি শুকনো ও চিরহরিৎ বন এবং  সুন্দরবনের পর বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় প্রাকৃতিক বনভূমি। এছাড়াও এটি দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম বণ্যপ্রাণী অভয়ারণ্য এবং জীব ও উদ্ভিদবৈচিত্র্যে দেশের সবচেয়ে সমৃদ্ধ বনাঞ্চল। সিলেট বিভাগের হবিগঞ্জ জেলার চুনারুঘাট উপজেলায় এর অবস্থান।৬২৩২ হেক্টর আয়তন বিশিষ্ট তরপ পাহাড় সংরক্ষিত বনভূমির অভ্যন্তরে ১৭৯৫.৫৪ হেক্টর এলাকা নিয়ে এ বনভূমি বিস্তার লাভ করতে শুরু করে ১৯৪০ সালের দিকে।  তবে রেমা-কালেঙ্গা অভয়ারণ্য হিসেবে স্বীকৃতি পায় ১৯৮২ সালে। পরবর্তীতে ১৯৯৬ সালে এ বনের সম্প্রসারণ করা হয়।বাংলাদেশের যে কয়েকটি প্রাকৃতিক বনভূমি এখনো মোটামু্টি ভাল অবস্থায় টিকে আছে, রেমা-কালেঙ্গা তার মধ্যে অন্যতম।এই বনাঞ্চলের বয়স প্রায় ১শ বছর। তবে নির্বিচারে গাছ চুরি ও বন ধ্বংসের কারণে এ বনভূমির অস্তিত্বও বর্তমানে হুমকির মুখে।  বনবিভাগের কালেঙ্গা রেঞ্জের চারটি বিটের (কালেঙ্গা, রেমা, ছনবাড়ী আর রশিদপুর) মধ্যে রেমা, কালেঙ্গা আর ছনবাড়ী বিস্তীর্ণ জঙ্গল নিয়ে রেমা-কালেঙ্গা বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য গঠিত। এটি বেশ কয়েকটি পাহাড়-টিলা নিয়ে গঠিত। এখানকার পাহাড়গুলোর সর্বোচ্চ উচ্চতা সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ৬৭ মিটার।


 অবস্থান ও আয়তন
রেমা–কালেঙ্গা অভয়ারণ্য সিলেট বিভাগের হবিগঞ্জ জেলার চুনারুঘাট উপজেলায় অবস্থিত। এটি মৌলভী বাজার জেলার শ্রীমঙ্গল উপজেলার খুব কাছে এবং ভারতের ত্রিপুরা সীমান্ত সংলগ্ন। রাজধানী ঢাকা থেকে সড়রপথে এর দূরত্ব প্রায় ১৩০ কিলোমিটার। এ এলাকার ভৌগলিক অবস্থানঃ ২৪°১০′৫২.৯৮″ উত্তর ৯১°৩৮′১৩.২৭″ পূর্ব
জীব ও উদ্ভিদবৈচিত্র্য
রেমা–কালেঙ্গা অভয়ারণ্য বিরল প্রজাতির জীববৈচিত্র্যেসমৃদ্ধ। বর্তমানে এই বনে ৩৭ প্রজাতির স্তন্যপায়ী,  সাত প্রজাতির উভচর, ১৮ প্রজাতির সরীসৃপ। এই বনে তিন প্রজাতির বানরের বাস, এগুলো হল: উল্টোলেজি বানর, রেসাস ও নিশাচর লজ্জাবতী বানর। তাছাড়া এখানে পাঁচ প্রজাতির কাঠবিড়ালি দেখা যায়। এর মধ্যে বিরল প্রজাতির মালয়ান বড় কাঠবিড়ালি একমাত্র এ বনেই পাওয়া যায়। বন্যপ্রাণীর মধ্যে উল্ল্যেখযোগ্য আরও রয়েছে মুখপোড়া হনুমান, চশমাপরা হনূমান, উল্লুক, মায়া হরিন,রামকুত্তা ,মেছবাঘ, বন বিড়াল, বন শুকুর , গন্ধগোকুল,খরগোশ, বেজি, সজারু ইত্যাদি।
 কোবরা, দুধরাজ, দাঁড়াশ, লাউডগা প্রভৃতি সহ এ বনে আঠারো প্রজাতির সাপের দেখা পাওয়া যায়।বাংলাদেশের এক নয়নাভিরাম স্থানের নাম রেমা-কালেঙ্গা।


রেমা-কালেঙ্গা বন্যপ্রাণী অভয়াশ্রমে আছে প্রায় ২০৫ প্রজাতির পাখি। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো—ভীমরাজ, টিয়া, হিল ময়না, লাল মাথা কুচকুচি, সিপাহি বুলবুল, বসন্তবৌরি, শকুন, মথুরা, বনমোরগ, পেঁচা, মাছরাঙা, ঈগল, চিল ইত্যাদি।এ নৈসর্গিক দৃশ্য না দেখলে কারো উপলব্ধির  সুযোগ নেই-এ স্থানটি কি রকম ! শকুন এর এক বিশাল অভয়ারণ্য এইখানে আছে ।
এই অভয়ারণ্যে ৬৩৮ প্রজাতির উদ্ভিদ গাছপালা-লতাপাতা আছে যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য উদ্ভিদগুলো হচ্ছে আওয়াল, সেগুন, কাঁকড়া, নেউর, হারগাজা, গন্ধরই, হরীতকী, বহেরা, জাম, ডুমুর, কাঁঠাল, চামকাঁঠাল, কাউ, কদম, রাতা, চিকরাশী, চাপালিশ, নিম, বনমালা ইত্যাদি।
  কোথায় বেড়াবেন
নয়নাভিরাম ছোট-বড় পাহাড়, টিলা ও ১টি লেক, ২শ ফুট উঁচু পর্যবেক্ষণ টাওয়ার যা পর্যটকদের খুব সহজেই আকৃষ্ট করতে পারে। রেমা-কালেঙ্গা বন্যপ্রাণী অভয়াশ্রমে আছে আধা ঘণ্টা, এক ঘণ্টা ও তিন ঘণ্টার তিনটি ট্রেইল। প্রতিটি ট্রেইলই ছবির মতো সুন্দর আর সাজানো। টাওয়ারের মাথাটি বনের উঁচু উঁচু গাছগুলোর মাথা ভেদ করে আকাশে উঁকি মেরেছে। সেখানে দাঁড়িয়ে তাই দেখা যায় বনের ভেতরের দূরদূরান্তের দৃশ্যাবলি। টাওয়ারের নিচেই আছে আঁকাবাঁকা একটি লেক।
 সেখানে বিভাগীয় বন কর্মকর্তার বিশ্রামাগার আছে।
 করাঙ্গী নদীর উপর ব্রীজ না থাকায় বর্ষা কালে কালেঙ্গা পৌছতে একটু বিলম্ব হয়।
 বাংলাদেশের আদিবাসী সম্প্রদায়ের জীবনধারাও দেখা যেতে পারে এখানে। রেমা-কালেঙ্গা বনের ভেতরেই আছে চারটি আদিবাসী সম্প্রদায়ের বসবাস। ত্রিপুরা সম্প্রদায়ের কয়েকটি পাড়া আছে এ বনের ভেতরেই। এ ছাড়াও সাঁওতাল, তেলুগু ও উড়ং আদিবাসীরও বসবাস আছে এখানে।


 রেমা-কালেঙ্গা বনের ভেতরে বিজিবি ক্যাম্প ফেলে কিছুদূর সামনেই রয়েছে মুক্তিযুদ্ধে শহীদ নায়েক আব্দুল মান্নান বীর উত্তমের কবর। ৩ নম্বর সেক্টরের এই যোদ্ধা ১৯৭১ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর পাক হানাদারদের সঙ্গে সম্মুখ যুদ্ধে এখানেই শহীদ হন। তার কবরের পাশের বিশাল সেগুন গাছটির শরীরে এখনো দেখা মেলে হানাদারদের সেদিনের গুলির চিহ্ন।

কীভাবে যাবেন
রেমা-কালেঙ্গা অভয়ারণ্যে যেতে পারেন দু’ভাবে। ঢাকা থেকে সিলেটগামী বাস কিংবা ট্রেনে চড়ে নামতে হবে শায়েস্তাগঞ্জ। সেখান থেকে বেবি টেক্সি চেপে আসতে হবে কালেঙ্গা। বাসে শায়েস্তাগঞ্জের ভাড়া ২৫০-৩০০ টাকা। শায়েস্তাগঞ্জে থামে সিলেটগামী আন্তঃনগর ট্রেন উপবন এক্সপ্রেস। বুধবার ছাড়া সপ্তাহের প্রতিদিন রাত ১০টায় ছাড়ে ট্রেনটি। ভাড়া ১২০-৩০৫ টাকা। শায়েস্তাগঞ্জ থেকে কালেঙ্গার বেবি টেক্সি ভাড়া ৪০০-৫০০ টাকা। রেমা-কালেঙ্গা অভয়ারণ্যে যাওয়া যায় দু’ভাবে। ঢাকা থেকে সিলেটগামী বাস কিংবা ট্রেনে চড়ে নামতে হবে শায়েস্তাগঞ্জ। সেখান থেকে সিএনজি/বেবি টেক্সি/বাইক চেপে আসতে হবে কালেঙ্গা। কালেঙ্গা যাওয়ার অন্য পথটি ঢাকা থেকে বাস কিংবা ট্রেনে শ্রীমঙ্গল, সেখান থেকে জিপে চড়ে কালেঙ্গা। শ্রীমঙ্গল থেকে গেলে জঙ্গলের ভেতরের দীর্ঘ পথটি এক কথায় অসাধারণ।বর্ষা মৌসুমে দুটি পথই বেশ কর্দমাক্ত থাকে বলে চলতে অসুবিধা হতে পারে।

কোথায় থাকবেন
কালেঙ্গায় থাকার জন্য আছে বন বিভাগের বিশ্রামাগার। সেখানে অবস্থান করতে হলে সিলেট বিভাগীয় বন কর্মকর্তার পূর্বানুমতি লাগবে। তবে জায়গাটিতে থাকার জন্য বেশ কয়েকটি ছোট কটেজ আছে এর মধ্যে ইকো গাইড Foyjullah Al Numan (01712875233,01685111220) এরও আছে,  নিসর্গ তরফ হিল কটেজ । কটেজ গুলা বেশ পরিচ্ছন্ন কটেজটির আবাসন ব্যবস্থা। কটেজ গুলার ভাড়া ১০০০ টাকা থেকে ৭০০ টাকা। এখানকার রান্নাও অসাধারণ। প্রতিবেলা খাবারের খরচ জনপ্রতি ২০০ টাকা আর সকালের নাস্তা ৬০ টাকা।
প্রয়োজনীয় তথ্য
রেমা-কালেঙ্গা অভয়ারণ্যে ভ্রমণে অবশ্যই সঙ্গে গাইড নেওয়া উচিত। ইকো গাইড  Foyjullah Al Numan (01685111220) এখানকার দক্ষ গাইডদের একজন। আগে থেকে যোগাযোগ করলে সায়েস্তাগঞ্জ কিংবা শ্রীমঙ্গল থেকেই পর্যটকটের নিয়ে আসার ব্যবস্থা করেন তিনি।

 রেমা-কালেঙ্গায় ভ্রমণে কিছু বিষয় মেনে চলা জরুরি। জঙ্গলে ভ্রমণকালীন নীরবতা অবলম্বন করুন। তাতে বন্যপ্রাণী ও পাখি বেশি দেখার সুযোগ হবে। বনের মধ্যে ধূমপান করবেন না। প্লাস্টিক জাতীয় কোনো প্যাকেট, বোতল জঙ্গলে ফেলবেন না। বনের ভেতরে গান-বাজনা থেকে বিরত থাকুন। গাছপালা নষ্ট করবেন না।

সঙ্গে যা নিবেন
কিছু জিনিসপত্র সঙ্গে থাকলে ভ্রমণ অনেক বেশি উপভোগ্য হয়। এ ভ্রমণে সঙ্গে অবশ্যই পতঙ্গ নিরোধক ক্রিম নেবেন। এ ছাড়াও রোদ টুপি, হেড ল্যাম্প, বাইনোকুলার কিংবা মনোকুলার, ক্যামেরা, জিপিএস, পানির বোতল ইত্যাদি সঙ্গে নিবেন।


ঢাকা থেকে যাওয়ার সহজ উপায় ট্রেন। সকাল ৬-৪০ এর ট্রেন এ উঠলে ১১-১৫ শায়েস্তাগঞ্জ নামিয়ে দিবে। ভাড়া শোভন ৯৫, চেয়ার ১২০। শ্রীমঙ্গল হয়েও যাওয়া যায়।রেল ষ্টেশন থেকে অটো করে নতুন ব্রিজ। ভাড়া ১০/- নতুন ব্রিজ থেকে চুনারুঘাট। আবার CNG। ভাড়া ১৫/-চুনারুঘাট থেকে আবার CNG তে বরজাস। ভাড়া ১৫/-এখন সেখানে রাস্তা তৈরির কাজ চলছে। তাই CNG ওখানেই নামিয়ে দিবে। সেখান থেকে ১ -১.৫ কিমি হাঁটলেই হিমালিয়া বাজার। এখান থেকে মোটর সাইকেল এ করে যেতে হয় কালেঙ্গা বাজার। কাঁচা মাটির রাস্তা।আমি এখানে আলম ভাই (মোটরসাইকেল চালক) এর নাম্বার দিয়ে দিলাম-০১৭৩৭৬২৭৭৪৭কালেঙ্গা তে থাকার কটেজ আছে। এখন মুলত একটাই কটেজ। তবে আরও কটেজ হচ্ছে। ভাড়া এক রুম এক রাত ১০০০/- এক রুম এ ৪ জন এর বাবস্থা। তবে রুম অনেক বড়। ফ্লরিং করলে আরও মানুষ থাকা যাবে। সাথে বাথরুম আছে। খাওয়ার বাবস্থা ও ওখানেই। প্রতি বেলা ১০০-২০০ টাকা।কটেজ এর মালিক-আব্দুর রাহমান- ০১৭৩১৯৭৭৮০৭এবার আসি গাইড প্রসঙ্গে। কালেঙ্গা তে এখন ১ জন মাত্র গাইড আছে।আব্দুর রহিম- ০১৭৪১১৪৪১৭৪খুবই ভালো ১জন মানুষ এবং wild life সম্পর্কে অনেক কিছু জানে। তাকে না নিয়ে আসলে জঙ্গল এ ঢোকা বৃথা। রেমা কালেঙ্গা তে ৪ টি বিট আছে। রেমা বিটকালেঙ্গা বিটছনবাড়ি বিটরশিদপুর বিট।জঙ্গল এ মোট ২৭ টি ট্রেইল আছে।এর মধ্যে আধা ঘণ্টা/ ১ ঘণ্টা এবং ৩ ঘণ্টা এর ট্রেইল আছে। একটি বড় ওয়াচ টাওয়ার আছে। তবে সবচেয়ে বড় হচ্ছে কালেঙ্গা থেকে রেমা বিট। Wild Life সম্পর্কে আর কিছু বললাম না, তবে leopard, jungle cat, fishing cat, Chita (very rare), black bear, python, black squirrel, fly squirrel, king cobra etc.. উল্লেখ্য। Camping এর জন্য অনেক জায়গা আছে। রাহিম ভাই কে নিলে, উনি সব বাবস্থা করে দিবে। তবে অবশ্যই শীতের সময়। আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হচ্ছে রেমা কালেঙ্গা, লাউয়াছরার মতো শুধু রক্ষিত এবং bounded বন নয়, এটা রক্ষিতএবং সংরক্ষিত উভয়ই। আর এর সাথে ভারত এর বর্ডার আছে। তাই ট্রেইল না চিনলে,নিজেরা জঙ্গল এ না যাওয়াই ভালো। গাইড অবশ্যই সাথে নিবেন।
- চুপি চুপি বনে গিয়ে প্রকৃতির মাঝে অসাধারন কিছু মুহুর্ত কাটিয়ে আবার চুপি চুপি বেড়িয়ে আসবেন।
- আপনি যে বনে গিয়েছিলেন যার কোন রকম চিহ্ন রেখে আসবেন না।
- প্লাস্টিক জাতীয় বর্জ্য বনে ফেলে আসবেন না।
- বনের জীব বৈচিত্র বিরক্ত হয় এমন কিছু করবেন না। জোরে জোরে কথা বলা বা গান গাওয়া এই জায়গায় নিষিদ্ধ।

No comments:

Post a Comment