লক্ষ্মী বাউর সোয়াম্প ফরেষ্ট
বানিয়াচঙ্গের লক্ষ্মী বাউর সোয়াম্প ফরেষ্ট (জলাবন) বানিয়াচং উপজেলার প্রান্ত সীমানায় খড়তি নদীর দক্ষিণ দিকে
বিরাট হাওরের মধ্যে অবস্থিত এই জলাবন। এলাকাবাসীর নিকট খড়তির জঙ্গল নামেও
পরিচিত।কখন এই জঙ্গল সৃস্টি হয় তা প্রবীণরাও বলতে পারেন না। এখানে প্রকৃতির
এই বিচিত্র রূপ সত্যিই বিস্ময়কর। বর্ষাকালে চারদিকে হাওরের পানি আর
জঙ্গলের অসংখ্য গাছপালার সবুজ অরণ্য পরিবেশকে এক নান্দনিক রূপ দিয়েছে।
হাওরে দূর থেকে জঙ্গলটিকে দেখে মনে হবে যেন পানির উপর ভাসছে। হিজল,
কড়চ, বরুণ, কাকুরা, বউল্লা, খাগড়া, চাইল্লা, নল ইত্যাদি অসংখ্য গাছ ও
গুল্মে পরিপূর্ণ এই জলাবন বলতে গেলে এতদিন অনাবিস্কৃতই ছিল। ইদানিং সিলেট
জেলার গোয়াইনঘাট উপজেলার “রাতারগুল” নামক সোয়াম্প ফরেষ্ট বা জলাবন সম্পর্কে
পত্রপত্রিকায় সংবাদ প্রকাশিত হলে বানিয়াচঙ্গ এর লক্ষ্মী বাউর জলাবনের সাথে
এর সামঞ্জস্য খুজে পাওয়া যায়। রাতারগুল সোয়াম্প ফরেস্টকে কেউ কেউ দেশের
একমাত্র সোয়াম্প ফরেষ্ট হিসাবে উল্লেখ করলেও ওয়াকেবহাল মহলের মতে
বানিয়াচঙ্গের লক্ষ্মী বাউর সোয়াম্প ফরেষ্ট একই শ্রেণীভুক্ত এবং অনেক বড়।
হবিগঞ্জ থেকে ১২ মাইল দূরবর্তী বানিয়াচং উপজেলা সদরের আদর্শ বাজার নৌকাঘাট
থেকে ৫কিলোমিটার উত্তরে হাওরের মাঝে এ জলাবন। প্রায় ৩ কিলোমিটার
এলাকাব্যাপী জঙ্গলের পূর্বে গঙ্গাজল হাওর ও নূরপুর, পশ্চিমে নলাই নদী,
উত্তরে খরতি নদী এবং দক্ষিণে লোহাচূড়া ও শোলাটেকা গ্রাম। জলাবন দেখতে
বর্ষাকালে নৌকা, শরৎকালে মোটর সাইকেল, ট্রলি সহ হালকা যানবাহনে কিংবা পায়ে
হেটে যেতে হয়। বর্ষাকালে কয়েকমাস বনের গাছপালা পানিতে নিমজ্জিত থাকে। বনের
ভিতরে কয়েকটি খাল ও বিল রয়েছে। এগুলোর স্বচ্ছ পানিতে জঙ্গলের প্রতিচ্ছবি
দেখা যায়। শরৎকালে পানি শুকিয়ে গেলেও বনের ভিতরে থাকা অনেকগুলো বিলে পানি
জমে থাকে। বিলগুলোতে প্রচুর মাছ পাওয়া যায়। এই জলাবনে রয়েছে বিভিন্ন
প্রজাতির পাখি, সরীসৃপ ও স্তন্যপায়ী জীবজন্তু। এগুলোর মধ্যে রয়েছে মেছোবাঘ,
শিয়াল, গুই সাপ, কেউটে, লাড্ডুকা, দারাইশ সহ বিষধর সাপ। বর্তমানে বিভিন্ন
জাতের বক, পানকৌড়ী, বালিহাঁস দেখা গেলেও শীতকালে ঝাঁকে ঝাঁকে অতিথি পাখির
কলকাকলিতে মুখরিত হয় নির্জন এই জলাবন। আশ্বিন মাসের শেষার্ধে বর্ষার পানি
কমে যাওয়ায় জলাবনের চারপাশে প্রচুর কচুরীপানা ও ঢোলকলমির ঝোঁপঝাড় এবং মাছ
সংরক্ষণের জন্য দেয়া হয়েছে বাঁশের পাটি বেড়া। এ কারণে নৌকা নিয়ে বনের
অভ্যন্তরে বর্তমানে প্রবেশ করা সম্ভব ছিল না। বন এলাকায় রয়েছে জোঁক ও
বিষধর সাপের ভয়। অবস্থাদৃষ্টে মনে হয় দীর্ঘদিনের অযত্ন, অবহেলা, প্রতিকূল
পরিবেশে জলাবনটি অস্থিত্ব সংকটে পড়েছে। অব্যাহতভাবে গাছ কাটায় এবং পরিবেশগত
কারণে অনেক গাছ মরে যাওয়ায় বনের আকার দিন দিন ছোট হয়ে আসছে। বনটিকে দেশী ও
অতিথি পাখির অভয়ারন্য ঘোষণা করা হয়েছে। কেউ পাখি শিকার করলে ৫হাজার টাকা
জরিমানা আদায় সহ শিকারীকে পুলিশের নিকট সোপর্দ করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
সিলেটের রাতারগুল দেশের একমাত্র সোয়াম্প ফরেষ্ট নয়। বানিয়াচঙ্গের লক্ষ্মী
বাউর জলাবনও একই শ্রেণীভুক্ত। এই জলাবনকে আকর্ষণীয় পর্যটন স্পট হিসাবে গড়ে
তোলার জন্য বানিয়াচং থেকে লক্ষ্মী বাউর জলাবন পর্যন্ত ৫ কিলোমিটার দীর্ঘসড়ক
ও লোহাচূড়া নদীর উপর ব্রীজ নির্মাণ সহ অবকাঠামোগত সুবিধা নিশ্চিত করা
প্রয়োজন।
বানিয়াচংয়ের হাওরে লক্ষ্মী বাউর সোয়াম্প ফরেষ্ট হতে পারে আকর্ষণীয় পর্যটন স্পট
মনসুর উদ্দিন আহমেদ ইকবাল ॥ বানিয়াচঙ্গের লক্ষ্মী বাউর সোয়াম্প ফরেষ্ট
(জলাবন) হতে পারে আকষর্ণীয় একটি পর্যটন স্পট। বানিয়াচং উপজেলার প্রান-
সীমানায় খড়তি নদীর দক্ষিণ দিকে বিরাট হাওরের মধ্যে অবসি'ত এই জলাবন
এলাকাবাসীর নিকট খড়তির জঙ্গল নামে পরিচিত। কবে থেকে এ জঙ্গল সৃস্টি হয়েছিল
তা প্রবীণরাও বলতে পারেন না। এখানে প্রকৃতির এই বিচিত্র রূপ সত্যিই
বিস্ময়কর। বর্ষাকালে চারদিকে হাওরের পানি আর জঙ্গলের অসংখ্য গাছপালার সবুজ
অরণ্য পরিবেশকে এক নান্দনিক রূপ দিয়েছে। হাওরে দূর থেকে জঙ্গলটিকে দেখে মনে
হবে যেন পানির উপর ভাসছে। হিজল, কড়চ, বরম্নণ, কাকুরা, বউলস্না, খাগড়া,
চাইলস্না, নল ইত্যাদি অসংখ্য গাছ ও গুল্মে পরিপূর্ণ এই জলাবন বলতে গেলে
এতদিন অনাবিস্কৃতই ছিল। ইদানিং সিলেট জেলার গোয়াইনঘাট উপজেলার “রাতারগুল”
নামক সোয়াম্প ফরেষ্ট বা জলাবন সম্পর্কে পত্রপত্রিকায় সংবাদ প্রকাশিত হলে
বানিয়াচঙ্গ এর লক্ষ্মী বাউর জলাবনের সাথে এর সামঞ্জস্য খুজে পাওয়া যায়।
রাতারগুল সোয়াম্প ফরেস্টকে কেউ কেউ দেশের একমাত্র সোয়াম্প ফরেষ্ট হিসাবে
উলেস্নখ করলেও ওয়াকেবহাল মহলের মতে বানিয়াচঙ্গের লক্ষ্মী বাউর সোয়াম্প
ফরেষ্ট একই শ্রেণীভুক্ত এবং অনেক বড়। হবিগঞ্জ থেকে ১২ মাইল দূরে বানিয়াচং
উপজেলা সদরের আদর্শ বাজার নৌকাঘাট থেকে ৫ কিলোমিটার উত্তরে হাওরের মাঝে এ
জলাবন। প্রায় ৩ কিলোমিটার এলাকাব্যাপী জঙ্গলের পূর্বে গঙ্গাজল হাওর ও
নূরপুর, পশ্চিমে নলাই নদী, উত্তরে খড়তি নদী এবং দড়্গিণে লোহাচূড়া ও
শোলাটেকা গ্রাম। জলাবন দেখতে বর্ষাকালে নৌকা, শরৎকালে মোটর সাইকেল, ট্রলিসহ
হালকা যানবাহনে কিংবা পায়ে হেঁটে যেতে হয়। বর্ষাকালে কয়েক মাস বনের
গাছপালা পানিতে নিমজ্জিত থাকে। বনের ভিতরে কয়েকটি খাল ও বিল রয়েছে। এগুলোর
স্বচ্ছ পানিতে জঙ্গলের প্রতিচ্ছবি দেখা যায়। শরৎকালে পানি শুকিয়ে গেলেও
বনের ভিতরে থাকা অনেকগুলো বিলে পানি জমে থাকে। বিলগুলোতে প্রচুর মাছ পাওয়া
যায়। এই জলাবনে রয়েছে বিভিন্ন প্রজাতির পাখি, সরীসৃপ ও সত্মন্যপায়ী জীবজন'।
এগুলোর মধ্যে রয়েছে মেছোবাঘ, শিয়াল, গুই সাপ, কেউটে, লাড্ডুকা, দারাইশসহ
বিষধর সাপ। বর্তমানে বিভিন্ন জাতের বক, পানকৌড়ী, বালিহাঁস দেখা গেলেও
শীতকালে ঝাঁকে ঝাঁকে অতিথি পাখির কলকাকলিতে মুখরিত হয় নির্জন এই জলাবন। গত ৫
অক্টোবর জেলা সদর থেকে কয়েকজন সাংবাদিক, বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের
নেতৃবৃন্দ ও বানিয়াচং গ্রামের বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ লক্ষ্মী বাউর জলাবন
পরিদর্শন করেন। জলাবনে যাওয়ার আগে উপসি'ত ব্যক্তিবর্গের সাথে সাংবাদিক ও
বাপা নেতৃবৃন্দ মতবিনিময় করেন। এ সময় উপসি'ত ছিলেন বাপা কেন্দ্রীয় কমিটির
যুগ্ম সম্পাদক শরীফ জামিল, বাপা জাতীয় পরিষদ সদস্য তোফাজ্জল সোহেল, স'ানীয়
পঞ্চায়েত প্রধান এনামুল হোসেন খান বাহার, এস এম আলী আক্কাছ, এস.এম আইয়ূব
আলী, মসলন্দ আলী, মোসত্মফা মিয়া, নিকটবর্তী নোয়াগড় গ্রামের মেম্বার
শাহজাহান মিয়া। স'ানীয় সাংবাদিক আজিমুল হক স্বপন, তোফায়েল রেজা সোহেল,
আব্দুল কুদ্দুস বিশ্বাস, দৈনিক সমকাল ও চ্যানেল ২৪ এর জেলা প্রতিনিধি সোয়েব
চৌধুরী, দৈনিক আমাদের সময় ও ইউএনবি জেলা প্রতিনিধি রম্নহুল হাসান শরীফ
প্রমুখ। আশ্বিন মাসের শেষার্ধে বর্ষার পানি কমে যাওয়ায় জলাবনের চারপাশে
প্রচুর কচুরীপানা ও ঢোলকলমির ঝোঁপঝাড় এবং মাছ সংরড়্গণের জন্য দেয়া হয়েছে
বাঁশের পাটির বেড়া। এ কারণে নৌকা নিয়ে বনের ভিতর বর্তমানে প্রবেশ করা সম্ভব
ছিল না। বন এলাকায় রয়েছে জোঁক ও বিষধর সাপের ভয়। অবস'াদৃষ্টে মনে হয়
দীর্ঘদিনের অযত্ন, অবহেলা, প্রতিকূল পরিবেশে জলাবনটি অসি'ত্ব সংকটে পড়েছে।
অব্যাহতভাবে গাছ কাটায় এবং পরিবেশগত কারণে অনেক গাছ মরে যাওয়ায় বনের আকার
দিন দিন ছোট হয়ে আসছে। জানা যায়, লক্ষ্মী বাউর জলাবন বানিয়াচঙ্গ গ্রামের
সৈদরটোলাসহ সাত মহলস্নাবাসীর নামে ওয়াক্ফকৃত। জলাবন তত্ত্বাবধান করার জন্য
এলাকাবাসীর রয়েছে ৯ সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটি। ওয়াক্ফ এস্টেটের
মোতওয়ালস্নী ও স'ানীয় পঞ্চায়েতের সরদার এনামুল হোসেন খান বাহার জানান,
প্রতিবছর বনের গাছের ডালপালা বিক্রয় করে এবং বিলগুলো ইজারা দিয়ে যে অর্থ আয়
হয় তা দিয়ে এলাকার ধর্মীয় ও শিড়্গা প্রতিষ্ঠানের উন্নয়ন ও জনহিতকর কাজে
ব্যয় করা হয়। এ বছর জলাবনে গাছের চারা লাগানোর একটি কর্মসূচী নেয়া হয়েছে।
এছাড়া বনটিকে দেশী ও অতিথি পাখির অভয়ারণ্য ঘোষণা করা হয়েছে। কেউ পাখি শিকার
করলে ৫ হাজার টাকা জরিমানা আদায়সহ শিকারীকে পুলিশের নিকট সোপর্দ করার
সিদ্ধানত্ম নেয়া হয়েছে। এ ব্যাপারে স'ানীয় পঞ্চায়েত শক্তিশালী ভূমিকা পালন
করছে। বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) কেন্দ্রিয় কমিটির যুগ্ম সম্পাদক শরীফ
জামিল বলেন, স'ানীয় পঞ্চায়েত ও সরকারের সহ-ব্যবস'াপনার মাধ্যমে
লক্ষ্মীবাউর জলাবন এলাকার পরিবেশ ও জীববৈচিত্র রড়্গার উদ্যোগ নিতে পারে। এই
জলাবন সোয়াম্প ফরেষ্টের পর্যায়ে পড়ে কি না এ ব্যাপারে বিশেষজ্ঞদের গবেষণা
করা প্রয়োজন। স'ানীয় সাংবাদিক আজিমুল হক স্বপন বলেন, সিলেটের রাতারগুল
দেশের একমাত্র সোয়াম্প ফরেষ্ট নয়। বানিয়াচঙ্গের লক্ষ্মী বাউর জলাবনও একই
শ্রেণীভুক্ত। এই জলাবনকে আকর্ষণীয় পর্যটন স্পট হিসাবে গড়ে তোলার জন্য
বানিয়াচং থেকে লক্ষ্মী বাউর জলাবন পর্যনত্ম ৫ কিলোমিটার দীর্ঘসড়ক ও
লোহাচূড়া নদীর উপর ব্রীজ নির্মাণসহ অবকাঠামোগত সুবিধা নিশ্চিত করা প্রয়োজন।
No comments:
Post a Comment